শূন্য দশকের কবি সৈয়দ শিশির। জন্মগ্রহণ করেন ২৩ জুলাই ১৯৭৭ সালে নরসিংদীর ভুইয়ম গ্রামে। বাবা সৈয়দ মঞ্জুরুল হামিদ, মা ফাতেমা বেগম। শৈশব থেকেই সৃজনশীল লেখালেখিতে যুক্ত হন তিনি। নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন জাতীয় দৈনিক ও ছোটকাগজে। পেশায় সাংবাদিক সৈয়দ শিশির সম্পাদনা করেন সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘আড়াইলেন’। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য ‘আমি তার যে আমার’। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী শিলুফা খাতুন ও দুই সন্তান সৈয়দা রোকাইয়া শশী, সৈয়দা রাকীবা ঐশীকে নিয়ে তাঁর পথচলা।
সময়ের কার্নিশ
স্বপ্নের কার্নিশে পাখা মেলে বসে থাকে জীবন
মুক্তির মোহ জাগিয়ে ছুঁয়ে যায় মরণ।
জীবন থেকে যেতে চায় খেলাঘরে।
জীবন আর মরণের সন্ধিক্ষণে টানাটানি চলে
খতিয়ান বহি নিয়ে; হায় খতিয়ান বহি!
সময়ের অন্দর মহলে কেবলই দুঃসময়
সুসময় হেঁটে চলে সময়ের কার্নিশ ঘেষে।
চিরচেনা দুঃসময়, কিছু চেনা সুসময়
এই বুঝি জীবন!
সময়ের ওই কার্নিশে কী শান্ত আমার স্বপ্ন
তাতেই জীবনের চাপা উত্তেজনা…
আশঙ্কার তালিকা
দৃশ্যমান অনেক কিছু আজ দেখেও
না দেখার ভণিতা করি,
পতাকা, পতাকার হেঁটে চলা
স্থান-কাল-পাত্রভেদ বলে
আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
মুক্তির চেতনা, যুদ্ধের চেতনা
রক্তঝরা সেই একাত্তরের চেতনা
আজ সকল পাখিদেরই মুখের বুলি;
ইতিহাসের গর্ভে জন্মায় বিকৃত ইতিহাস;
আশঙ্কা হয় যে- হারাচ্ছি নাকি চেতনা
দেশপ্রেমের শুভ্রতা।
দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে আশঙ্কার তালিকা!
ছুঁতে পারি না
কান্না আসে দুঃখে, আবার সুখেও।
ঘরের চারদিকের দেয়াল দুঃখে গড়া
সুখে গড়া শুধু উপরের ছাদ;
ছুঁতে পারি না ছাদ, কাছে পাই না অনেক কিছু…
সূর্য ও নদীর কবিতা
ঘুম ভাঙ্গালো সূর্যের পদধ্বনি।
ঘুমের আগে ভবিষ্যতের চাষাবাদ।
স্নান সারিয়ে চলে যায় সূর্য;
স্বামীর চোখে বাবা হবার স্বপ্ন
বউয়ের চোখে মা হবার স্বপ্ন।
আমি স্বামী নই,আমার-
ছেলের বাপ হবারও বাসনা নেই।
দিন শেষে প্রতিরাতে
স্নানের জন্য আমি চাই
অষ্টাদশী নতুন নদী।
চিরন্তন প্রবৃত্তি
রাত বারোটায় ক্লান্ত কবি ঢুকে পড়েন
চিরচেনা ছোট্ট খুপড়িতে,
চোখে পড়ে শুধু আঁধার আর
সিগরেটের মাথায় থাকা এক টুকরো আলো।
বিড়ালের চোখের মতো জ্বলতে থাকা আলো
কবিকে নিয়ে চলে ভাবনার জগতে।
মানুষের আশা নামক আদিম প্রবৃত্তিটি
হয়তো বা এমনি করে জ্বলে চিরন্তন।
জন্ম ও বিশ্বাস
এ পৃথিবীতে আসবো এমন কোনো ভাবনা
কখনো আমার ছিলো না;
অর্থাৎ, আমি জন্মগ্রহণ করিনি। বলা যায়-
বিশেষ কোনো পরিস্থিতি অথবা প্রক্রিয়ার শিকার;
যেমন- সুইচ টিপলে ঘুমন্ত বাতি জ্বলে ওঠে।
জীবনের খেলাঘরেও কাউকে বিশ্বাস করতে চাইনি।
ফুটন্ত গোলাপ, প্রস্ফুটিত গোলাপ কিংবা পদদলিত গোলাপ
কোনোটাতেই আমার বিশ্বাস ছিলো না। বলা যায়-
বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েই বিশ্বাসহারা হয়েছিলাম।
খুব করে পড়েছি
আমি পড়েছি পড়েছি আকাশের মন
আমি পড়েছি পড়েছি আদরের ঘর,
আমি খুব করে পড়েছি পথের দাবি
যে পথে মানুষ মানুষকে করে পর।
আমি পড়েছি পড়েছি মুখোশের চোখ
আমি পড়েছি পড়েছি শ্রমিকের ঘাম,
আমি খুব করে পড়েছি বিকৃত কাম
যে কাম ভুলে যায় সভ্যতার নাম।
আমি পড়েছি পড়েছি দালালের সুখ
আমি পড়েছি পড়েছি কাশবন হাসি,
আমি খুব করে পড়েছি লাল বিকিনি
যে বিকিনিতে যায় মিশে উদোম কাশি।