বেলা অবেলা
আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে পারিনি,
এভাবেই আমার কতটা প্রহর অন্যের হয়েছিল অথবা
আমার কতটা দিন অন্যের হয়েছিল নিজেও জানি নে।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর
আমি কেবল অন্যের হতে থাকি; নিজের প্রিয় কিছু শব্দ হারাতে থাকি;
অন্যের হতে থাকে নিজের ঘাম জড়ানো গচ্ছিত ক’খানা সিকি আধুলি,
শেষ সম্বল মাথা গোজার ঠাঁয় কবে বেহাত হয়েছিল নিজেও জানি নে।
আমি কেবল শিগারেটের মতো দিন দিন খাঁটো হতে থাকি
ছোট হতে থাকি অনু পরমানুর চেয়েও ফিনফিনে অথবা
ক্ষনিক ধরীত্রী’র অলীক কোন জলহীন বৃক্ষের মতো; তবুও
অনাদরে পরে থাকা ছাইপাস সিগারেটে নিজেকে খুঁজিফিরি
জলতরঙ্গ হয়ে নিজের মধ্যে অন্যরকম ছবি আঁকি।
আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে পারি নি
আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে শিখি নি
আজ বেলা অবেলাকে আপন করে ভাবতে শিখেছি
তোমার নিটোল পায়ের ছন্দ খুঁজে পেয়েছি।
২২ মার্চ, ২০১৫ খ্রী :
প্যারিস।
সেদিনের গাওয়া গান
বাহির চোখে চিরচেনা পথ হারালেও, ভেতর চোখ
তোমাকে ঠিকই চিনে নিবে; তুমি অবিচল ঠাঁয় করে নিবে শিরা ধমনি।
লবনাক্ত ঠোঁটে প্রিয় কিছু স্বাদ হারালেও ;
মাটির সুগন্ধ ঠিকই খুঁজে পাবে; সুষে নিবে সুমিষ্ট মাটির জল।
জীর্ণ হস্তে কাকনের শব্দ ঝিমুলেও; ভোরের আলোতে নগ্ন অট্টালিকা আর
পাখির কলতানে ধ্বনিত হবে আমার গাওয়া গান।
আমি বিমুগ্ধ চোখে দেখি সেই চিরচেনা শব্দ আর ফাগুনের কথামালা ;
আমি বিমল আনন্দে সেদিনের গান গাইতে থাকি,
অবহেলিত বীণার তারে নতুন সুর বেজে উঠে ;
আমি বিদ্বগ্ধচিত্তে গাইতে থাকি আমার গাওয়া সেদিনের গান
প্রতিটি নি :শ্বাসে, বাতাসের কণায় ফিরে ফিরে পাই
না পাওয়া আমারই যত মান অভিমান।
১৪ই মে ২০১৫খ্রী
প্যারিস।
ভালোবাসা’র ছুটি
নিদ্রাহীন রজনী
কিংবা নিসঙ্গ একাকীত্বে
ওমন বিমল আনন্দের
মিথ্যা দীর্ঘশ্বাস কাছে ফেলনা তুমি।
অথবা সুনিপুন নৃত্য ভঙ্গিমায়,
আপন ভেবে খুব কাছে এসো না।
আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা
সকল উচ্ছাস, যতো প্রেম সুর লহড়ী;
ফুঁ-দিয়ে উড়িয়ে দিলাম অন্য আকাশে।
তপ্ত বুক ফেটে কালো মেঘ করুক
শুন্য বুকে কঠিন বৃষ্টি ঝরুক;
হে স্বর্গীয় ভালোবাসা
আজ তোমায় দিলেম ছুটি।
২৫ জুন, ২০১৩ইং খ্রী:
প্যারিস
শাল অরণ্যের মেয়ে
জাগর স্বপ্ন নিয়া; পাখি ডাকা স্নিগ্ধ ভোরে
শিশির ভেজা দুর্বাঘাসে কোমল সবুজ মাঠ পেরিয়ে
মৃদু ছন্দময় নূপুর পায়ে, জংলি ফুল খোপায়,
ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট রাঙিয়ে, তুমি এসো।
ওহে সুনয়না আমায় বিশ্বাস কর, আপন
সংস্কৃতি সাজে তুমি অনন্যা, অপরুপা;
তুমি এসো গ্রামীণ শৈল্পিক হস্ত খচিতো
তাঁতে বুনা লাল রঙের দকমান্দা পরে।
যতো ভিনগায়ের সংস্কৃতি ভুলে,
রাশি রাশি জংলি ফুল তুলে
সেরেজিং গীত নৃত্যের তালে;
তুমি এসো, ফিরে এসো তুমি
শাল অরণ্যের মেয়ে হয়ে।
৫ জুলাই ২০১৩ খ্রী:
প্যারিস
ইলশে চুমু
এখনো ভুলতে পারিনি
তোমার প্রথম নোনা ইলশে ঘ্রাণ চুমু;
এখনো আনমনে ইচ্ছে হলেই
দুÕঠোঁটে ল্যাপ্টে থাকা স্বাদ নিই।
তোমার কুশল জানতে চাওয়া চিঠি
ভাঙা ট্রাঙ্কে অনেক যত্নে তুলে রেখেছি;
এখনো ইচ্ছে হলেই সেই
পুরোনো চিঠির গন্ধ নিই।
২২ জুলাই ২০১৩ইং খ্রী:
প্যারিস